প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। বৈশ্বিকভাবেও খুবই উচ্চকিত মানবাধিকার প্রসঙ্গ। কিন্তু ১৯৭৫ সালে আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম সেদিন কোথায় ছিল মানবাধিকার?
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অব ফেম-এ শেখ রাসেল দিবসের উদ্বোধন ও শেখ রাসেল পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গণবভন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ প্রশ্ন করেন তিনি।
শেখ রাসেল দিবসে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বুলেটের আঘাতে কোনো শিশুর ছোট্ট শরীর ক্ষতবিক্ষত হোক তা চাই না, যুদ্ধ বন্ধ হোক, বাংলাদেশ যে আদর্শ নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তা নিয়েই যেন এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই আমাদের চাওয়া।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন তাদের মুখে মানবাধিকারের কথা মানায় না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টে যখন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল আমার আপনজনকে সেদিন কোথায় ছিল মানবাধিকার? ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ডের যাতে বিচার না হয় সে জন্য আইন করে সব পথ বন্ধ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এমন কী বিচার চাইতে গেলে বিব্রত হতেন উচ্চ আদালতের বিচারপতিরাও। কিন্তু এখন তারাই আবার মানবাধিকারের কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার তখনই চাইতে পেরেছি যখন দেশের মানুষ ক্ষমতায় এনেছেন। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় গিয়ে খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল তাদের মুখেই এখন শুনতে হয় ভোট আর গণতন্ত্রের কথা।
ছোট ভাই রাসেলের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিশুর কোনো শত্রু নেই, থাকা উচিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা এতই বর্বর যে, শেখ রাসেলের মতো ১০ বছরের একটি শিশুকেও হত্যা করে নির্মমভাবে। মৃত্যুর পর মানুষের বয়স বাড়ে না। তাইতো ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিনেও মনে ভাসে ১০ বছর বয়সী শেখ রাসেলের ছোট্ট মুখ।
শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই রাসেল বাবার স্নেহবঞ্চিত ছিল, দেশের কাজের জন্য প্রায়ই বাবা বাড়ির বাইরে বা জেলে থেকেছেন।
বহু বছর আগের পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।
আজকের অনুষ্ঠানে ১০টি ক্যাটাগরিতে ৬০ জন শেখ রাসেল পুরস্কার পান। এর আগে ৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব এবং দেশের সব সংসদীয় আসনে তিনশটি শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলকে নিয়ে নির্মিত একটি অ্যানিমেশন মুভির ট্রেইলর এবং একটি থিম সং পরিবেশিত হয়।
এর আগে সকালে শেখ রাসেলের জন্মদিনে প্রতিবছরের মতো এবারও ভালোবাসা জানাতে বনানীতে তার কবরে ছুটে যান বড় দুই বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এ সময় কবরে ফুল দিয়ে ছোট ভাইকে স্মরণ করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এ দিনে (১৮ অক্টোবর) ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন।